Saturday, July 5, 2025

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনার চেষ্টা, খালেদা জিয়াকে যে দেশে নেওয়া হতে পারে

আরও পড়ুন

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস ও কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশ পাঠাতে কাতার থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনার চেষ্টা করছে বিএনপি।

ইতিমধ্যে সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে এখনও বিমানে লম্বা সময় ভ্রমণের মতো শারীরিকভাবে উপযুক্ত নন তিনি। মেডিকেল বোর্ড সায় দিলেই চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবেন তিনি। সেখানকার মাল্টিপল ডিজিজ সেন্টারে তার লিভার প্রতিস্থাপনসহ জটিল চিকিৎসাগুলো করানো হবে।

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একাধিক সদস্য এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. আল-মামুন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি। বিমানে ওঠার জন্য ফিজিক্যালি তিনি এখন পর্যন্ত ফিট নন। আরও কিছুটা সময় লাগবে। ধরুন এ অবস্থায় যদি তাকে বিমানে ওঠানো হয়, বিমানে রিস্ক হয়ে গেলে কে দায় নেবে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আর বিমান বলে, সেখানে তো উঠতে হবে; ওঠার পর যদি ওনার প্রেশার ফল করে কিংবা মাঝপথে যদি অন্য জটিলতা সৃষ্টি হয় তা হলে এর বিকল্প কী?

আরও পড়ুনঃ  স্ত্রীর গলায় ছুরি চালায় স্বামী, মুখে বালিশ চেপে ধরে সহযোগী

ওনাকে তো এশিয়া মহাদেশের কোনো দেশে নেওয়া হচ্ছে না। তাই স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘ সময় বিমানে থাকতে হবে। এসব বিষয় নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। ওনার জন্য দেশের বাইরে থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনা হবে।’

এই চিকিৎসক বলেন, ‘আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন করা। তবে এর আগে তার পুরো শরীর চেকআপ করে অন্য জটিলতাগুলো কমিয়ে আনতে হবে। প্রথমেই লিভার প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। তাই শারীরিক অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

‘বিএনপি চেয়ারপারসন এখন কেমন আছেন’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগের চেয়ে ভালো আছেন। প্রতিদিন চিকিৎসকরা নিয়ম করে বাসায় গিয়ে ফলোআপ করছেন। বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা আসছেন। তিনি সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। তার ঘুম ও খাওয়া-দাওয়া স্বাভাবিক নিয়মে হচ্ছে। স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটারগুলো সঠিক মাত্রায় রয়েছে। তবে বয়সের কারণে মাঝেমধ্যেই কিছু জটিলতা দেখা দেয়।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিকেল বোর্ডের সমন্বয়ক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কয়েকটি হাসপাতালের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। যুক্তরাজ্যে নেওয়া হলে ৮ থেকে ১৩ ঘণ্টা সময় লাগে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রয়োজন ১৮ থেকে ২১ ঘণ্টা ফ্লাইং আওয়ার। কাজেই এই যাত্রার জন্য তার শারীরিক সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই কিছুটা সময় লাগবে। বেশকিছু জটিল চিকিৎসা করাতে অনেকটা সময় তাকে বিদেশে থাকতে হবে।’

আরও পড়ুনঃ  দল গঠনের পরই যে নির্বাচন চাইলেন সদস্য সচিব আখতার

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। গত জুনে অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ারের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরে তার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়।

এর আগে গত বছরের অক্টোবরে তার লিভার সিরোসিস রোগের চিকিৎসা করতে ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত জনস হপকিন্স হাসপাতালের তিন চিকিৎসক। চিকিৎসা শেষে গত ২ জুলাই এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

সবশেষ গত ৮ জুলাই হঠাৎ প্রেশার ও রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হন। সেই থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। চার বছর আগে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তির পর খালেদা জিয়াকে বিভিন্ন সময়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকতে হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  সিরিয়ায় হামলা, ইসরায়েলের বিমানকে আটকে দিল তুরস্ক

গত ছয় বছরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও এভারকেয়ার হাসপাতালে দেড় বছরেরও বেশি সময় ভর্তি থাকতে হয়েছে তাকে।গত তিন বছরে পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে কয়েক দফা অনুমতি চাইলেও শেখ হাসিনা সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরদিনই খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করে সরকার।

এদিকে যুক্তরাজ্য থেকে ঢাকায় পৌঁছেছেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবন পৌঁছেছেন। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি সব শেষ ঢাকায় এসেছিলেন শর্মিলা রহমান সিঁথি। সে সময় তিনি অসুস্থ শাশুড়ির শয্যাপাশে ছিলেন।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ