Monday, June 30, 2025

নৌকায় ভ্রমণ শেষে তিনি এখন ধানের শীষে

আরও পড়ুন

২০২১ সালের ২ নভেম্বর ‘নৌকায় ভোট না দিলে কবর দিতে দেব না’ শীর্ষক শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত একটি সংবাদ সারা দেশে আলোচনার জন্ম দেয়।

আলোচিত বক্তব্যটির জেরে সংবাদ প্রকাশের দিন নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

ওই প্রচারণা সভায় উপস্থিত ছিলেন কোটবাজার দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির তৎকালীন সভাপতি আবু ছিদ্দিক। যুগান্তর প্রতিনিধিকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, গ্রামে যারা নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করছেন তারা মারা গেলে কবরস্থানে কবর দিতে দেবেন না বলে অধ্যক্ষ মো. শাহ আলম হুঁশিয়ার করেছেন।

৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের নৌকার যাত্রী হয়ে একরকম ভ্রমণবিলাসে দিন কাটানো কথিত এই ব্যবসায়ী নেতা এখন ভোল পালটে উপজেলা বিএনপির ব্যবসা ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

অথচ নৌকার পক্ষে নির্বাচনে মুখ্য ভূমিকা রাখার পাশাপাশি ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল মেয়াদে অধ্যক্ষ শাহ আলম চেয়ারম্যান থাকাকালীন তার আত্মীয় পরিচয়েও আধিপত্য দেখানোসহ অবৈধ পন্থায় উপার্জন করেছেন তিনি।

২০১১ সালের ১ মে প্রতিষ্ঠিত হয় কোটবাজার দোকান মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেড। কক্সবাজারের দক্ষিণ অঞ্চলে বাণিজ্যিক প্রাণ কেন্দ্র খ্যাত কোটবাজারের প্রায় সাত শতাধিক ব্যবসায়ী বর্তমানে যার সদস্য।

আরও পড়ুনঃ  বিপ্লব ব্যর্থ হলে যাদের গ..লায় ফাঁ..সির দ..ড়ি পড়বে, তারাই বিপ্লবী

এ সংগঠনের দুই মেয়াদে সভাপতি ছিলেন হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রশিদ আহমেদ ডিলারের পুত্র আবু ছিদ্দিক।

দায়িত্বে থাকাকালে তার বিরুদ্ধে সদস্যদের আমানতের টাকা থেকে লোন বাবদ প্রায় সাড়ে ৩ লাখ আত্মসাৎ, ব্যবসায়ীদের লেনদেন সংক্রান্ত সালিশে জামানত রেখে ফেরত না দেওয়া, সমিতির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ উঠে।

সেই সময় নিজের নির্বাচনি প্রচারণার অফিস উদ্বোধন করতে এমন দাম্ভিক উক্তি করেন নৌকা প্রতীক নিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারি এই দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, আইন অনুযায়ী আবু ছিদ্দিক যা চাচ্ছেন তা বিধিসম্মত নয়। মেয়াদ পূর্ণ হলে নতুন করে সেখানে নির্বাচন হবে এটাই রীতি অন্য কোনো অপশন নেই।

সর্বশেষ ২০২২ সালের নভেম্বরে সংগঠনের ৪র্থ কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনে নিজে অংশ না নিয়ে ভাইকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ করান আবু ছিদ্দিক। ব্যালটের মাধ্যমে আবু ছিদ্দিকের দুর্নীতির নীরব প্রতিবাদ করে ভাই আব্দুল মাজেদ সওদাগরকে সভাপতি নির্বাচিত করেননি সদস্যরা। বর্তমানে ১২ সদস্যের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে খোরশেদ আলম বাবুল সভাপতি ও আব্দুর রহমান সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

আরও পড়ুনঃ  আমরা আওয়ামী লীগের দোসর, এই অপবাদের সত্যতা নেই : জি এম কাদের

উপজেলা সমবায় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মেয়াদ আরও এক বছর থাকা সত্ত্বেও আবু ছিদ্দিক কমিটি ভেঙে দিতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বাবুলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করে কোনো উত্তর না পেলেও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের সমিতির সদস্যরা নির্বাচিত করেছে। মেয়াদ আছে এবং আইনও আছে। সে অনুযায়ী আমরা ব্যবসায়ী ভাইদের কল্যাণে প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছি।

উপজেলা বিএনপির নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রভাবশালী নেতা বলেন, রাজপথে আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর সংগ্রাম করেছি, আর আবু ছিদ্দিকের মতো সুবিধাবাদীরা বিএনপির এই দীর্ঘ লড়াইয়ে ছিল না। তিনি আওয়ামী লীগের মধু খেয়েছেন; এখন সুসময়ের কোকিল হয়ে আবারও উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরোয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, কর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি- দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না। চাঁদাবাজি চলবে না, মানুষকে অত্যাচার করা যাবে না, শ্রমজীবী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী ভাইদের ওপর জুলুম করা যাবে না।

আরও পড়ুনঃ  হঠাৎ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল

এছাড়াও অপতৎপরতার অংশ হিসেবে ভাড়াটে বখাটেদের দিয়ে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের আবু ছিদ্দিক হেনস্তা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার রাতে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হিসাব নিকাশে ব্যস্ত ছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইসহাক। এ সময় তিন-চারজন যুবক এসে তাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাইতে চাইলে প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রতিরোধে তিনি বেচে যান।

ইসহাক বলেন, আবু ছিদ্দিক সওদাগর সমিতি দখলে নিতে চাচ্ছেন। আমি বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটিতে আছি। উনিই আমাকে অপহরণের চেষ্টা করেছেন, আমরা তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ।

যদি কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

আবু ছিদ্দিক বলেন, আমার পরিবারের সবাই বিএনপি, দলে অবদান আছে। অধ্যক্ষ শাহ আলম আমার আত্মীয় লাগে, তাই নির্বাচনে পাশে ছিলাম। তবে সমিতি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

সূত্র ও ছবি : যুগান্তর

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ