বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মধ্যে একটি মানবিক করিডোর স্থাপনের বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে সরকার। জাতিসংঘের অনুরোধে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, কারণ মার্চ কিংবা এপ্রিলের মধ্যে রাখাইনে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশকে মানবিক সহায়তার জন্য করিডোর চালু করার অনুরোধ জানায় সংস্থাটি। মিয়ানমারসহ আরাকান আর্মির সঙ্গে যতটুকু প্রয়োজন সেটুকু আমরা নিশ্চয়ই যোগাযোগ করব। নিজেদের স্বার্থেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারব না। তবে, করিডোর ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত মেনে চলতে হবে।
রোববার (২৭ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে করিডোরের ব্যাপারে সম্মত হয়েছি।’
উপদেষ্টা বলেন, এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সে ব্যাপারে বিস্তারিত আপাতত বলছি না। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’ করিডোর বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ হবে কিনা– এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা মালপত্র যাওয়ার ব্যবস্থা; অস্ত্র তো আর নেওয়া হচ্ছে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, প্রশাসনিক পর্যায়ে মানবিক করিডোর ইস্যুতে বাংলাদেশে কিছু মতবিরোধ রয়েছে। তবে জাতিসংঘের আহ্বানের প্রতি সাড়া দিয়ে সরকার শেষ পর্যন্ত করিডোর ব্যবহারের সম্মতি দিয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিশ্বের কোনো মানবিক করিডোরই নিরাপত্তা ঝুঁকির বাইরে ছিল না। যদিও মানবিক করিডোর দেওয়া হয় সাধারণ নাগরিকের সহায়তার জন্য। তবে এ ধরনের করিডোর অপরাধীরা নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। করিডোর দিয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রমও সংঘটিত হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্য বা আফ্রিকায় যুদ্ধাবস্থার কারণে যত মানবিক করিডোর দেওয়া হয়েছে, সেগুলো দিয়ে নানা অপকর্ম সংঘটিত হতে দেখা গেছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বে মানবিক করিডোরগুলো কখনও পুরোপুরি নিরাপদ ছিল না। যদিও এসব করিডোরের উদ্দেশ্য থাকে সাধারণ জনগণকে সহায়তা প্রদান, বাস্তবে তা অনেক সময় অপরাধীদের জন্য নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। করিডোরের মাধ্যমে অপরাধমূলক তৎপরতার ঝুঁকিও থেকেই যায়। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে অতীতে যত মানবিক করিডোর খোলা হয়েছিল, সেগুলোর অনেকটিই অপরাধ ও অপকর্মের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল বলে অভিজ্ঞতা রয়েছে।
সম্প্রতি জাতিসংঘ বাংলাদেশকে জানিয়েছে, রাখাইনে পুরো অর্থনৈতিক কাঠামো ধসে পড়েছে এবং সেখানে ভয়াবহ খাদ্য সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংস্থাটির মতে, দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি রাখাইনের অন্যান্য জনগোষ্ঠীরও সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ পরিস্থিতি এড়াতে মানবিক করিডোরের মাধ্যমে সহায়তা পাঠাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।