জুলাই শহীদদের হত্যার পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ত্বকী, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী, তনুসহ নারায়ণগঞ্জের সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ আয়োজিত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে গোলটেবিল বৈঠকে এ দাবি করেন ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি।
এ হত্যাকণ্ডের সঙ্গে শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান জড়িত দাবি করে ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, জবানবন্দিতে তারা ত্বকীকে হত্যার বিশদ বিবরণ দেয়। তাতে উল্লেখ করা হয়ে সাবেক এমপি নাসিম ওসমানের ছেলে ও শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমানের নির্দেশে তার টর্চারসেলে ত্বকীকে রাত ১২টার আগেই হত্যা করা হয়েছে।
১৭ বছরের কিশোর ত্বকীকে সবাই মিলে গজারির লাঠি দিয়ে পিটিয়ে অজ্ঞান করার পর বুকের ওপর উঠে গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যা করে। চোখ উপড়ে ফেলে, শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেয়। পরে আজমেরীর গাড়িতে করেই ত্বকীর লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দিয়ে সেই টর্চারসেলে ফিরে গিয়ে বিরিয়ানি খায়।
৭ আগস্ট র্যাব আজমেরী ওসমানের উইনার ফ্যাশনখ্যাত সেই টর্চারসেলে অভিযান চালায়। সেখানে তারা দেয়ালে ও আসবাবপত্রে গুলির চিহ্ন দেখতে পায়। রক্তমাখা প্যান্ট, দড়ি, রক্তমাখা গজারির লাঠি, ইয়াবা সেবনের সরঞ্জামাদি, পিস্তলের অংশসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে।
তিনি বলেন, ত্বকী হত্যার ১ বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ৫ মার্চ র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল হাসান র্যাবের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করেন। তিনি বলেছিলেন, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করে। হত্যার কারণ হিসেবে তারা তিনটি বিষয়কে উল্লেখ করেন।
তারা বলেন, এক. ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রফিউর রাব্বির সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে শক্ত অবস্থান গ্রহণ, দুই. এর কিছুদিন আগে গণপরিবহনে শামীম ওসমান ও তার অনুগত লোকদের ব্যাপক চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন গড়ে তোলা, তিন. চিহ্নিত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ভূমি দখলের প্রতিবাদে জনগণের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া।
এ তিনটি কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা ত্বকীকে হত্যা করেছে বলে উল্লেখ করে র্যাব অভিযোগপত্র সাংবাদিকদের সরবরাহ করে। র্যাব তখন অচিরেই এ অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করা হবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু তিন মাস পর ৩ জুন ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদে এই নিয়ে বিভিন্ন কথা হওয়ার পর ত্বকী হত্যার তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
রফিউর রাব্বি বলেন, সাড়ে ১১ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিচারের দাবিতে কর্মসূচি করে আসছি। বিচারের দাবিতে বিশ্বের ২১ দেশে প্রতিবাদ হয়েছে। বিচারের দাবি রুদ্ধ করতে শামীম ওসমান আমাদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও হত্যার হুমকি দিয়েছেন। আমার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা দিয়েছে, মামলা করায় আইনজীবী প্রদীপ ঘোষ বাবুকে হুমকি দিয়ে তার চেম্বারে হামলা চালিয়েছে। আতঙ্ক ছড়ানো আজমেরী পুলিশের সহায়তায় হোন্ডাবাহিনী ও গাড়ির বহর নিয়ে শহর দাপিয়েছে।
বৈঠকে ছিলেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, আব্দুল হাই শিকদার, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, আমিনুল হক প্রমুখ।