Tuesday, July 1, 2025

বলা হতো আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে: আশফাক নিপুন

আরও পড়ুন

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। তার নির্মাণে উঠে আসে দেশের চিত্র। ব্যক্তিজীবনের প্রতিবাদী আশফাক নিপুন। নায্যদাবীতে সবসময় কথা বলেন তিনি। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সোচ্চার ছিলেন তিনি। শিক্ষার্থীদের জন্য রাজপথেও নেমেছিলেন তিনি। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চ্যানেল 24 অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন আশফাক নিপুণ। উত্তর দিয়েছেন বিভিন্ন প্রশ্নের।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা প্রসঙ্গে কিছু বলুন…
বিগত ১৫ বছর স্বৈরশাসনের মধ্যে ছিলাম আমরা। নানান রকমের চাপ ও দুর্নীতি থেকে মুক্তি পাওয়া অনেক বড় বিষয়। অর্জন অবশ্যই স্বস্তির। তবে যেকোনো বিপ্লবের ধাপে ধাপে কাজ থাকে। স্বৈরাচারের পতনের মধ্যে দিয়ে আমরা প্রথম ধাপটা শেষ করেছি । এখন দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে যে কারণে স্বৈরাচারের পতন ঘটানো হয়েছে ওই কারণগুলো বাস্তবায়ন করা। যেমন, গণতন্ত্র, সাম্য, স্বাধীনতা এবং আইনের শাসন ফিরিয়ে নিয়ে আসা, পাশাপাশি সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করতে হবে এখন। আর এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

স্বৈরাচারী সরকার ব্যবস্থার মধ্যে থেকে আপনি বারবার সাহসিকতার প্রতিবাদ করেছেন, আপনার কনটেন্টেও সে ধারা বজায় ছিল। সে সময়ে কোনো চাপের মধ্যে কী পরেছিলেন?

এখন আমরা বিজয়ের মুহূর্তে আছি তাই বলতে পারছি। তবে ১০ বছর আগে আমি ফেসবুকে কিংবা ব্লগে লিখালিখি করতাম কিংবা কোনো কনটেন্ট বানাতাম তখন আমাকে নানা ধরণের চাপের মধ্যে থাকতে হতো। কারণ তখন একধরণের সেন্সরশিপ ছিল। এমনকি মহানগর বানানোর পর আমাকে ডিবি অফিস, এসবি অফিস এবং সিটি এসবি অফিসে যেতে হয়েছে। মহানগর দুই বানানোর পর আমাকে তো আরও চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু আমি সব সময় বিশ্বাস করি যেটা ন্যায়, সত্য সেটা প্রকাশ করা উচিত। এবং সেটা সৎ ভাবে প্রকাশ করার জন্য কোনো না কোনো সময় আপনি পুরস্কৃত হবেন। সমাজের অন্যায় নিয়ে আমি সবসময় কথা বলেছি। আমি আমার সামর্থ্যের মধ্যে থেকে ন্যায়ের পাশে দাড়াই। আমার সব সময় মনে হয়েছে সত্যের জয় হবেই। এটাই আমার জীবনের মূল মন্ত্র বলা যায়।

আরও পড়ুনঃ  আ.লীগের নিষিদ্ধের বিষয়ে বিএনপি সুস্পষ্ট অবস্থান না নেওয়ায় ছাত্রদল নেতার পদত্যাগ

তবে অবশ্যই আমাকে অনেক চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। আমার পরিবারের ওপর দিয়ে অনেক প্রেশার গিয়েছে। আমার স্ত্রী সংগীতশিল্পী এলিটাকে ধন্যবাদ দিতে চাই কারণ, আমার থেকে ওর চাপ আরও বেশি ছিল। আমি তো কাজ করে গিয়েছি কিন্তু এটা কই গিয়ে গড়াবে সেটা নিয়ে পরিবারের তো চিন্তায় থাকেই। মহানগর করার পর যে আমাকে ডিবি এবং এসবিতে নিয়ে গেল পাশাপাশি মহানগর দুই এবং লেখালেখি করার জন্য যে ফোনকলে বলা হতো আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে। এইসবের প্রভাব তো এলিটার ওপর পড়তো।

সেন্সরশিপের এই গণ্ডি কি আগামীতে কাটিতে ওঠা সম্ভব হবে?
সেন্সরশিপ খুবই পুরনো একটি প্রথা যেটা এখন পৃথিবীতে বিলুপ্ত প্রায়। সেন্সর সার্টিফিকেট আছে সেন্সরশিপ নেই। সেন্সরশিপ করে আমাদের দেশের অনেক কনটেন্ট আটকে রাখা হয়। যেমন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ভাইরের সিনেমা, সাজ্জাদ খানের সিনেমা, রায়হান রাফীর ওয়েব কনটেন্ট আটকে রাখলো। এটার তো কোনো যুক্তি নেই। এখন এই সেন্সরশিপ থেকে মুক্তি পেতে কাজ করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  রবিবার থেকে ৭০ টাকায় চিনি, ১০০ টাকায় মিলবে সয়াবিন তেল

শিল্পীদের মধ্যে দুইটা ভাগ দেখা যাচ্ছে, যারা স্বৈরাচারের পক্ষে ছিল তারা নানান ভাবে এখনও ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ করছেন…

উনারা তাদের মতাদর্শ থেকে কখনো এ ব্যাপারে আওয়াজ তোলেননি। এবং তারা ওই ব্যাপারে স্থির থাকতে চেয়েছিলেন। অন্যদিকে আমরাও আমাদের বিষয়ে স্থির থেকেছি। এখন উনারা পরাজিত। আর পরাজিতের ক্রোধ-আক্রোশ বেশি থাকে। সেই কারণে হয়তো উনারা বিষয়টা বিতর্কিত করতে চাচ্ছেন। তবে এটাকে আমি খুব বেশি পাত্তা দিচ্ছি না। আমি মনে করি বিজয়ীদের অনেক সহনশীল হতে হয়। বিজয়ীদের উদার হতে হয়। তাই যারা স্বৈরাচারের বিপক্ষ ছিল তাদের দিক থেকে কোনো ইঙ্গিত-পূর্ণ কথা বলা হচ্ছে না এবং ভবিষ্যতেও হবে না। আমরা তাদের পরাজিতদের ক্রোধ বা আক্রোশ স্বাভাবিকভাবেই দেখছি। ক্রোধ প্রকাশ হয়ে যাওয়া ভালো। আর তারা তো লিখে ক্রোধ প্রকাশ করতে কোনো সহিংস কিছু করছেন না। এই ক্রোধকে বের হতে দিতে হয়, এটা স্বাভাবিক। আমরা তাদের নিয়ে ভাবছি না। আমরা আরও ভালো বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা ভাবছি। পেছনের দিকে তাকানোর সময় নয় এখন।

যেই তরুণদের জন্য স্বৈরাচারের পতন সম্ভব হলো তাদের নিয়ে কী মনে হয়?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজ স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে সামনে এতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। বিগত ১৫ বছরের ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক দল এমন করেনি। কিন্তু এই ছাত্ররা মাঠ কামড়ে পরেছিল আর তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে অন্যান্যরাও মাঠে এসেছে। তরুণদের যে সাহস সেটা দেখে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আবার একই সঙ্গে যুদ্ধ জয়ের পর লক্ষ্যে রাখতে হবে রিলাক্স যেন না হয়ে যাই আমরা। এই ছাত্ররা তো এখনো মাঠে কাজ করে যাছে বাংলাদেশ গড়তে। আমরা যেন কোনো ভাবে রিলাক্স হয়ে না যাই বিজয়ের পর। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে ওদের মতো অসহিষ্ণু আচরণ না করি, প্রতিহিংসা পরায়ণ না হই। বিজয়ীদের সহিষ্ণু হতে হয়।

আরও পড়ুনঃ  শেখ হাসিনার দেশে ফেরা নিয়ে জয়ের নতুন বার্তা

স্বাধীন দেশের প্রথম রাত কেমন ছিল?

আনন্দ এবং বিষাদের মধ্যে সময়টা গিয়েছে। কারণ, বিভিন্ন জায়গায়, লুটপাট, অগ্নি সংযোগ হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে এসব নিয়ে একধরণের চিন্তা ছিল। তার সঙ্গে প্রচুর গুজবও ছিল। আসলে বিজয় অর্জন হলে বিজয়ীর আক্রোশও চলে আসে। এটা দেখেও খারাপ লাগছিল। তবে আশা করছি পরিস্থিতি আগের থেকে ভালোর দিকে যাচ্ছে। ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছে। সব মিলিয়ে স্বাধীনতার প্রথম রাত স্মরণীয় হয়ে থাকবে, আমি সারারাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি। দেশকে এগিয়ে নিতে এখন কাজে ফিরতে হবে।

আমরা কি এই আন্দোলন নিয়ে সামনে কিছু দেখতে পাবো?

আমার মনে হয় এর মধ্যে অনেকে পরিকল্পনা করে ফেলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে কনটেন্ট নির্মাণের। কারণ এখন স্বৈরাচারের পতন হয়েছে এখন আর সেই ভয় লাগবে না। যেই ভয় নিয়ে আমাকে মহানগর সিরিজ দুইটা বানাতে হয়েছিল। আমি চেষ্টা করব এই সময়ে যেই ভয় থাকে সেটা নিয়ে কাজ করার। সহজ কিছু আমাকে আকৃষ্ট করে না।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ