Wednesday, July 2, 2025

শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র

ভারতীয় গণমাধ্যমে যেভাবে এলো রাষ্ট্রপতির বক্তব্য

আরও পড়ুন

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। সম্প্রতি মানবজমিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। তার এ মন্তব্যকে ঘিরে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও নানাভাবে বিষয়টি জায়গা করে নিয়েছে।

সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি বলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করার কোনো দালিলিক প্রমাণ তার কাছে নেই। রাষ্ট্রপতির এ বক্তব্য দেশজুড়ে নানা মহলেও নানা আলোচনা তৈরি হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। এরপর প্রায় আড়াই মাস পেরিয়ে গেছে। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়েছিলেন, হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিয়েছেন। কিন্তু হাসিনাপুত্র জয় দাবি করেন, তার মা দেশ ছাড়ার আগে পদত্যাগ করেননি। সাড়ে তিন মাস পর বিষয়টি নিয়ে আবার বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, হাসিনা পদত্যাগ করেছেন— এমন কোনো প্রামাণ্য নথি তার কাছে নেই।

রাষ্ট্রপতি বলেন, শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার আগে তাকে কিছু জানাননি। সেনাপ্রধানকে তিনি এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনিও সুস্পষ্টভাবে তাকে কিছু জানাতে পারেননি। তিনি দাবি করেন, সেনাপ্রধান তাকে জানিয়েছেন, তিনি শুনেছেন হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। তবে সেটি হাসিনা রাষ্ট্রপতিকে জানানোর সময় পাননি।

আরও পড়ুনঃ  যৌক্তিক সমালোচনাকে আমরা স্বাগত জানাই : শিবির সেক্রেটারি

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরপর মন্ত্রিপরিষদের এক সচিব রাষ্ট্রপতির কাছে হাসিনার পদত্যাগপত্রের কপি সংগ্রহের জন্য গিয়েছিলেন। তখনো রাষ্ট্রপতি তাকে কোনো নথি দিতে পারেননি। রাষ্ট্রপতি সে সময় তাকে জানান, তিনি খুঁজছেন।

রাষ্ট্রপতি আরও জানান, বাংলাদেশ সংবিধানে অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে একটি পদত্যাগপত্র পাঠাতে হয়। এজন্য ৫ আগস্ট সকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে আসবেন বলে ফোন এসেছিল। তবে এক ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয় ফোনে জানানো হয়, হাসিনা আর আসছেন না।

দেশটির আরেকটি সংবাদমাধ্যম দ্য উইকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি বলেছেন, তিনি কেবল শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন বলে শুনেছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো প্রমাণ নেই।

আরও পড়ুনঃ  মাঝ আকাশে উড়োজাহাজে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি, একই পরিবারের পাঁচজন আইসিইউতে

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতির এমন মন্তব্যের পর নতুন প্রশ্ন উঠেছে, হাসিনার বিদায় গণঅভ্যুত্থানের বদলে কী সেনা অভ্যুত্থান কি না। বিষয়টি এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, যদি অন্তর্বর্তী সরকার দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেনাপ্রধান দেশের দায়িত্ব নিতে পারেন।

শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন মিথ্যাচার করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

সোমবার (২১ অক্টোবর) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার অফিস কক্ষে তিনি বলেন, তার এ পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উনি যদি তার বক্তব্যে অটল থাকেন তাহলে বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে যাবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, ‘আপনারা জানেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি’। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে জাতির উদ্দেশ্যে ওই ভাষণ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি।

আরও পড়ুনঃ  বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তেলের দাম

কিন্তু আড়াই মাস পর এখন রাষ্ট্রপতি বলছেন ভিন্ন কথা। ‘তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এ-সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই’। রাষ্ট্রপতির ভাষ্যে, ‘আমি বহুবার পদত্যাগপত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেছি, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। হয়তো তার সময় হয়নি।’ মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি গত ১৯ অক্টোবর (শনিবার) মানবজমিন পত্রিকাটির ‘জনতার চোখ’-এ প্রকাশিত হয়।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ